দেশে আবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে শীর্ষক সংবাদটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। চলতি সপ্তাহে নতুন রোগী বেড়েছে ৬৭ শতাংশের বেশি। মৃত্যু বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হারও বেড়েছে দেড় শতাংশ। সবচেয়ে বিপজ্জনক তথ্য হলো এবারে তরুণ গোষ্ঠী আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। আর মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে বয়স্কদের। সংক্রমণের সংখ্যা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না আইসিইউ বেড। এমনকি মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইসিইউ প্রটোকলও কাজ করছে না, যা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে চিকিৎসকদের। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবারের করোনাভাইরাসটি যুক্তরাজ্যের করোনার নতুন স্ট্রেন বা ক্ষিপ্ত প্রকৃতির। সে দেশ থেকে বর্তমানে যেসব বাংলাদেশী দেশে আসছেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই উচ্চপর্যায় থেকে ছাড় পাচ্ছে তদ্বিরের মাধ্যমে। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। এক্ষেত্রে গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণের শুরুর পর্যায়ের মতো কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সামনে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। দেশে শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার কথাও ভাবা হচ্ছে। অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সুতরাং যা কিছু করার এবং ব্যবস্থা নেয়ার সেসবই নিতে হবে জরুরীভিত্তিতে কালবিলম্ব না করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে বলেই প্রত্যাশা। হাসপাতালগুলোকে জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত যথাযথ হস্তক্ষেপ, দূরদর্শী নীতির কারণে দেশে অবশ্য করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বরাবরই থেকেছে নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ বিশ্বের সেই বিরল তিন-চারটি দেশের একটি যারা করোনা ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে ক্রয় করে জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে দেশজুড়ে চলছে সেই সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। তবু উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গত কয়েকদিন ধরে আবার করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়ছে। সুতরাং টিকা নেয়ার পাশাপাশি সবাইকে হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতন। কোভিড-১৯ দেশে সংক্রমণের মাত্র ১১ মাসের মাথায় ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচী। জনসাধারণ এই টিকা পাচ্ছেন বিনামূল্যে। দিন দিনই টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে টিকার মজুদও যথেষ্ট। তবে মনে রাখতে হবে কোন টিকাই শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। সুতরাং মুখে মাস্ক পরাসহ মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। প্রয়োজনে করোনার টিকা নিয়ে যেতে হবে বস্তিতে, গ্রামাঞ্চলে ও চরাঞ্চলে। দেশের অধিকাংশ মানুষ টিকা নিলেই করোনা প্রতিরোধে গড়ে উঠবে হার্ড ইমিউনিটি তথা সর্বাত্মক সুরক্ষা। এর পাশাপাশি সবাইকে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। মুখে মাস্ক পরা, হাতে সর্বদা সাবান বা সেনিটাইজার ব্যবহারসহ সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই সবসময় উত্তম।
Leave a Reply